কোরবানি শব্দের আভিধানিক অর্থ ত্যাগ, আত্মোৎসর্গ; নৈকট্য লাভ। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কোরবানি হলো, জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।
এদিকে পশু জবাইয়ের আগে অনেককে অংশীদারদের নাম বলতে দেখা যায়। কিন্তু কোরবানির সময় কোরবানিদাতাদের নাম উল্লেখ করা জরুরি নয়। কেননা কার পক্ষ থেকে পশু কোরবানি করা হচ্ছে, সেটি তো পশু কেনার সময়ই নির্ধারিত হয়ে যায়।
অর্থাৎ কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে দেখা হবে মালিকানা কাদের। পশুতে যার যার মালিকানা আছে, তারা যাদের নামে কোরবানি আদায়ের নিয়ত করবেন তাদের নামেই কোরবানি হবে।
পশু জবাইয়ের সময় কোরবানিদাতাদের নাম উল্লেখ করাও সুন্নত নয়। কেননা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির পশু জবাই করার সময় কার পক্ষ থেকে কোরবানি হচ্ছে তার নাম মুখে উল্লেখ করেননি। তিনি কোরবানির পশু জবাই করার সময় মুখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলেছেন।
তবে কুরবানির আগে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নামগুলো পাঠ করা যেতে পারে, তবে এটি জরুরি বা সুন্নত হিসেবে নয়। এভাবে উল্লেখ করলেও হবে যে, আমরা অমুক বলছি, আমাদের কোরবানি কবুল করুন, অথবা সবার তরফ থেকে কোরবানি কবুল করুন। (সহীহ বুখারী-৫৫৫৮, সহীহ মুসলিম -১৯৬৬)
মৃতের নামে দেয়া কোরবানির পশুর গোশত খাওয়া যায়?
কোনো মৃত ব্যক্তির নামে দেয়া কোরবানির গোশত নিজেরাও খেতে পারবেন, আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবেন। তবে মৃত ব্যক্তি কোরবানি করার অসিয়ত করে গিয়ে থাকলে, সেই কোরবানি তার ত্যাজ্য সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে দেয়া ওয়াজিব এবং এর গোস্ত নিজেরা খেতে পারবেন না। গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে।
মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পদ না থাকলে, কোরবানি দেয়া ওয়াজিব নয়। নিজের সম্পদ থেকে দিলে— তা নফল হিসেবে গণ্য হবে এবং সেটার গোশত নিজেরা খেতে পারবেন।
মৃতের নামে কোরবানি দিলে নিজের ওয়াজিব কোরবানি হয় কি?
যেহেতু নিজের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। তাই তার উচিত নিজের নামেই কোরবানি দেয়া। আর মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা। এতে করে নিজের কোরবানিও আদায় হবে, আবার মৃতকে সওয়াবও পৌঁছানো হবে। এটাই নিরাপদ ও উত্তম পদ্ধতি।
তবে কতিপয় ফিকাহবিদদের মতে, মৃত ব্যক্তির অসিয়ত ছাড়া এমনিতেই তার নামে নফল কোরবানির নিয়তে কোরবানি দিলে— কোরবানিদাতা ব্যক্তির নিজের ওয়াজিব কোরবানিটিও আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রথম সুরতটিই অধিকতর নিরাপদ। (মাজমাউল আনহুর : ০২/৫১৬; আল-বাহরুর রায়িক : ০৮/৩১৮; রাদ্দুল মুহতার : ০৯/৪৮৪; ফাতাওয়া কাজিখান : ০৩/৩৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৭/৪৪৪; বাজ্জাজিয়্যাহ আলা হাওয়ামিশিল হিন্দিয়্যা : ০৬/২৯৫; ফাতহুল মুইন : ০৩/৩৮২)
0 coment rios: